রাঙ্গামাটির কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে খুলে দেওয়া হয়েছে। এই গেটগুলোর মাধ্যমে ৬ ইঞ্চি করে পানি ছাড়া শুরু হয়েছে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গতকাল শনিবার রাত ১০টায় এই জলকপাটগুলো খোলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে আজ সকালে গেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গেট খোলার পেছনের কারণ
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কতৃপক্ষ জানায়, পূর্বনির্ধারিত সময়ে গেট খোলার জন্য তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে, সেখানে পানির প্রবাহ কম থাকায় এবং রাতের সময়ে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি এড়াতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে সকালেই গেট খোলা হবে। তাদের মতে, রাতের অন্ধকারে কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে, যা মানবিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
পানির স্তর পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
গেট খোলার সময়, প্রতিটি গেট ৬ ইঞ্চি করে খোলা হয়েছে। যদি পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে কর্তৃপক্ষ গেটের খোলার পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে। স্পিলওয়ের গেট খোলার ফলে কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাবে, যা পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে নদীর পানি স্তরের পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ ও প্রস্তুতি
কাপ্তাই বাঁধের গেট খোলার কারণে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু মানুষ এই পদক্ষেপকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য জরুরি বলে মনে করেন, অন্যদিকে অনেকে তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা বেড়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তুতি বাড়িয়েছে এবং প্রয়োজন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। নদীর পাশের গ্রামগুলোতে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং কোনো প্রকার গুজব না ছড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈদ্যুতিক উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রভাব
কাপ্তাই বাঁধের গেট খোলার ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। অতিরিক্ত পানি ছাড়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, অপরিকল্পিতভাবে পানি ছাড়া হলে বন্যার আশঙ্কা বেড়ে যায়, যা স্থানীয় কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি করতে পারে।
কর্ণফুলী নদীর বন্যা পূর্বাভাস এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কর্ণফুলী নদীর পানি স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটির কিছু এলাকায় বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদীর পানির স্তর বাড়লেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থায় সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিচ্ছে।
কাপ্তাই বাঁধের গেট খোলা এবং কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যাতে সম্ভাব্য দুর্যোগের প্রভাব কমানো যায়। স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় আশা করা হচ্ছে যে, এই সংকটময় সময়ে জনজীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
/ s24online