গ্রুপ পর্ব দাপটের সঙ্গে পার হওয়া আর্জেন্টিনার সামনে নকআউট পর্বের প্রথম চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির ইকুয়েডর। কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষ নিয়ে যতটা না চিন্তায় আলবিসেলেস্তেরা, তার চেয়ে বেশি চিন্তা ছিল অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে নিয়ে। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে চিলির বিপক্ষে খেলার সময় পায়ে চোট পেয়েছিলেন মেসি। এরপর পেরুর বিপক্ষে ম্যাচটি খেলেননি তিনি। তবে ইকুয়েডর ম্যাচের আগে দুশ্চিন্তা কাটছে আর্জেন্টিনার।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা দিয়েই শিরোপার খরা কেটেছিল আর্জেন্টিনার। এরপর তো ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরারও অবসান ঘটেছিল। এবার আর্জেন্টিনার সামনে কোপা আমেরিকার শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। কোপা আমেরিকায় দাপটের সঙ্গেই কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে মেসির দল। তবে এখন থেকে বাকি সব কয়টি ম্যাচই নকআউট পদ্ধতির। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেই হবে টাইব্রেকার। সুতরাং নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে ফল বের করতে না পারলেই ঘটতে পারে অঘটন।
তাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারা খেলোয়াড়দের গুরুত্ব এখন আরও বেশি। আর মেসির মতো করে আর কেউ কি পারে পার্থক্য গড়ে দিতে! তাই তো কোয়ার্টার ফাইনালের আগে মেসির সেরে ওঠা নিয়ে আর্জেন্টাইনদের এত চিন্তা।
চিলির বিপক্ষে ম্যাচের ২৪ মিনিটে চোট পেলেও ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছাড়েন মেসি। এরপর পরীক্ষানিরীক্ষায় বড়সড় দুশ্চিন্তার কিছু জানানো হয়নি দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের আগে সেরে ওঠা নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। যে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন সাংবাদিক পারাদিজো। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির খেলা ঝুঁকিতে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘সময়ের সঙ্গে লিওনেল মেসির চোট নিয়ে আমরা যা জেনেছি, তা হতাশা বাড়াচ্ছে। আমি আপনাদের সরাসরি বলতে পারি যে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির উপস্থিতি ঝুঁকিতে আছে। সে এখনো ছিটকে যায়নি; কিন্তু ঝুঁকিতে আছে। এমনকি কেউ কেউ বিশ্বাস করে, এ পরিস্থিতিতে তাকে খেলালে চোটের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।’
তবে আশার কথা হচ্ছে, শঙ্কার মেঘ অনেকটাই কেটে গেছে। গত মঙ্গলবার (২ জুন) সুস্থ বোধ করায় দলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন মেসি। পরদিনও কোনো ধরনের অসুবিধা ছাড়াই অনুশীলন করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাই আশা করা হচ্ছে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নয়, বরং একাদশের খেলোয়াড় হিসেবেই ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু করবেন মেসি।
আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি অবশ্য এখনও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন। ম্যাচের পূর্বে শেষ অনুশীলন সেশন দেখেই মেসির খেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্ক্যালোনি বলেন, ‘আমি এখনোই তার অবস্থা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমি মনে করি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম। আজকে (বৃহস্পতিবার) আমি এ বিষয়ে তার (মেসির) সঙ্গে কথা বলব, নিশ্চিতভাবেই, কারণ ম্যাচের মাত্র একদিন বাকি এবং আমার মনে হয়, সে সময় নিক এবং যতটা পারা যায় অনুশীলন করুক। অনুশীলনের পূর্বে আমি তার সঙ্গে কথা বলব এবং তারপর সে সিদ্ধান্ত নেবে। আমার সঙ্গে এখনও তার কথা হয়নি। দেখা যাক আগামীকাল কী হয়।’
বাতাসে গুঞ্জন, আর্জেন্টিনার আরেক মহাতারকা অ্যানহেল ডি মারিয়ার একাদশে থাকা নির্ভর করছে মেসির ওপরেই। মেসি শেষ পর্যন্ত একাদশে থাকলে ডি মারিয়া ইকুয়েডরের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাঁ প্রান্তে থাকবেন নিকো গঞ্জালেস। মাঝমাঠে ম্যাক অ্যালিস্টার, এনজো ফার্নান্দেজ এবং রদ্রিগো ডি পল শুরু করবেন। আক্রমণভাগে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে লাউতারো মার্টিনেজের স্থান পাকা।
একাদশের বাকি জায়গাগুলো নিয়েও খুব বেশি অনিশ্চয়তা নেই। গোলপোস্টের নিচে এমি মার্টিনেজই থাকছেন। রক্ষণভাগে নাহুয়েল মলিনা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ এবং নিকোলাস ত্যালিয়াফিকোই থাকছেন।
আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ: এমি মার্টিনেজ; নাহুয়েল মলিনা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, নিকোলাস ত্যালিয়াফিকো; রদ্রিগো ডি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার, এনজো ফার্নান্দেজ, নিকো গঞ্জালেস; লিওনেল মেসি ও লাউতারো মার্টিনেজ।