নওগাঁয় বিএনপি অফিসে হামলা: আ.লীগের ৯২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, ২৫০ জন অজ্ঞাত আসামি

s24 online
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কর্তৃক ভাঙচুর করা জেলা বিএনপির কার্যালয় | s24online

নওগাঁ জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে একটি অপ্রত্যাশিত হামলার ঘটনার পর। সম্প্রতি নওগাঁ সদর থানায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশের করা মামলায় ৯২ জন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই মামলায় আরও ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনার পটভূমি

গত ৩ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নওগাঁ শহরের কেডি স্কুল মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিএনপির অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই হামলা পরিচালনা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস তুহিন রেজা।

হামলার বিবরণ

সদর মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, হামলাকারীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং চেয়ার, টেবিল, টিভি, ফ্যানসহ ভেতরে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা শুধুমাত্র ভাঙচুরেই থেমে থাকেনি, বরং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই সহিংস ঘটনায় নওগাঁ শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

পুলিশি পদক্ষেপ ও গ্রেপ্তার

এই হামলার ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ নিশ্চিত করেছেন যে, এই মামলায় প্রথম গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি হলেন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব কাদের ফাহিম। পুলিশ বলছে, আরও আসামিদের গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন : রাজশাহী কলেজ হোস্টেল থেকে বিপুল অস্ত্র ও ককটেল উদ্ধার: শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ বলেছেন, “আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওইদিন আমাদের দলীয় কার্যালয়ে তাণ্ডব চলানোর পাশাপাশি পুরো শহরে অরাজকতা ছড়াতে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে।” তিনি আরও জানান, “শান্তির শহর নওগাঁকে যারা অশান্ত করেছিল তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি আশাবাদী যে, পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে।

রাজনৈতিক উত্তাপ ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

এই ঘটনার পর নওগাঁয় রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের, তবে এই ধরনের সহিংস ঘটনার ফলে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এই ঘটনা থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক অস্থিরতা পরবর্তীতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ

এখন পুরো নওগাঁ শহরের পরিস্থিতি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে এবং যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। এছাড়া, রাজনৈতিক নেতাদেরও এই বিষয়ে সংযম ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে শহরে শান্তি বজায় থাকে।

 মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

এখন পর্যন্ত, স্থানীয় এবং জাতীয় মিডিয়া এই ঘটনার প্রতি গভীর নজরদারি রাখছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে, এবং তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি বিশ্বাস রাখতে চাচ্ছে যে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তবে, অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়, সেটাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

নওগাঁয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশি পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি কিভাবে সমাধান হবে, তা ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে। তবে, সকলের প্রত্যাশা একটাই—শান্তিপূর্ণভাবে এই সমস্যা সমাধান এবং নওগাঁয় পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা।

/ s24online

আরো সংবাদ পড়ুন...

TAGGED:
Share This Article
Leave a comment