নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে শনিবার (২৩ আগস্ট) রাতের আঁধারে। উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত এই অফিসে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে উপজেলা বিএনপি এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ঘটনার বিবরণ এবং বিএনপির অভিযোগ
রানীনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাসে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন সময়ে রাতের আঁধারে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এমনকি খুন ও গুমের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। বর্তমানের এই অগ্নিসংযোগের ঘটনাও তারই বহিঃপ্রকাশ। আমাদের দলীয় কার্যালয়ে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগ একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
রানীনগর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোসারব হোসেন বলেন, “রোববার সকালে আমরা খবর পাই যে, আমাদের উপজেলা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে অফিসে থাকা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার ছবি, ব্যানার এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এছাড়া দুর্বৃত্তরা ইটের দেয়াল ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী মাসুদ জানান, “অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়ার পর আমরা সেনাবাহিনীসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ বা মামলা করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান জানান, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি এবং খবর পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পটভূমি: রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানীনগর উপজেলায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি দাবি করছে, তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সরকারদলীয় কর্মীরা। তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যেখানে বিরোধী দলগুলোর অফিস ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে তারা সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিক্ষোভ এবং আন্দোলন
এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে। রোববার সকালে রানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং তাদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন।
আইন ও বিচার: ন্যায়বিচারের প্রশ্ন
এই ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রানীনগর উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক সংঘাত ও উত্তেজনা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলেরও সচেতন হতে হবে, যেনো দেশের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।
/ s24online