বাংলাদেশের কোমল পানীয় খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে তুর্কি কোম্পানি কোকাকোলা আইসেক (CCI)। কর ও শুল্ক জটিলতা এবং উচ্চ করহার এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) একটি চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (NBR)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় খাতে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে এই শিল্পের মোট করহার বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ, যা অন্যান্য শিল্পের তুলনায় সর্বোচ্চ। এই উচ্চ করহার এবং শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল না থাকায় কোকাকোলা আইসেক তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত করেছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বিডা জানিয়েছে, কোমল পানীয় খাতের ন্যূনতম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা এবং সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া, আগামী ৩ বছর এই করহার অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন : বগুড়ার ছাত্রীনিবাসে নার্সিং শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার: প্রেমের সম্পর্কের ইঙ্গিত
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোমল পানীয় খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে আনুমানিক ১,২২৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০.০১ শতাংশ কম। বিডার সূত্রে জানা গেছে, কর বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কোকাকোলার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে এবং এর ফলে রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কোকাকোলা আইসেক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস লিমিটেডকে ১৩ কোটি ডলারে কিনে নেয়। সেই সময়ে কোম্পানিটি আরও ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা জানিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ কর ও শুল্ক বিবেচনা করে তারা এখন সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।
বিডা এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে যে, বর্তমান কর নীতি পরিবর্তন না হলে এবং প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক কমানো না হলে, কোমল পানীয় খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন হবে। এছাড়া, ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা রাজস্ব আদায়ে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কোকাকোলা ছাড়াও কিনলে, ফান্টা ও স্প্রাইটের মতো কোমল পানীয় উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস লিমিটেড। এই ব্র্যান্ডগুলি দেশের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং বাজারে তাদের উল্লেখযোগ্য শেয়ার রয়েছে। কিন্তু কর ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাদের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে পণ্যগুলির চাহিদা কমে যাচ্ছে।