শেখ হাসিনার ফোনালাপের পর গ্রেফতার: বরগুনার আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির

s24 online

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে বুধবার (১৪ আগস্ট) ভোরে বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রেফতারটি ঘটে যাওয়ার পেছনে বিশাল একটি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গ্রেফতারের কারণ এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

গ্রেফতারের পেছনের কারণ

বরগুনা সদর থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ টিম মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে গ্রেফতার করে। যদিও সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা ওসি মিজানুর রহমান নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে যে, শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে এই গ্রেফতার হয়েছে।

শেখ হাসিনার সাথে ফোনালাপ

গত সোমবার (১২ আগস্ট) আওয়ামী লীগের এই নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ফোনে কথা বলেন। তিন মিনিটের এই ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রতি শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা শুনে মো. জাহাঙ্গীর কবির প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আপা, আপনি ঘাবড়াবেন না। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি।”

বিষয়টি আরও জটিল করে তোলে

এই ফোনালাপের পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়। বিশেষ করে মো. জাহাঙ্গীর কবিরের ‘আপা, আপনি ঘাবড়াবেন না’ এই মন্তব্যটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের গুজব রটায়। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার এই সাহসিকতার কথা জানানোর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ঘাবড়াবো কেন? আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কিভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে। বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন থাকেন।”

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলা

গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া

মো. জাহাঙ্গীর কবিরের গ্রেফতারের পর বরগুনা সহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের অনেকেই এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছেন এবং এই ঘটনাকে ‘অবিচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, মো. জাহাঙ্গীর কবির সবসময়ই দলের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং দলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেন।

স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন, মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার করা হয়েছে। তবে, পুলিশ প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। বরগুনা জেলায় মো. জাহাঙ্গীর কবিরের গ্রেফতারের পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা ?

গ্রেফতারের পেছনে থাকা সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র’ বিশেষভাবে উঠে আসছে। রাজনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে গ্রেফতারের মূল কারণ হতে পারে শেখ হাসিনার ফোনালাপকে কেন্দ্র করে জন্ম নেওয়া বিভ্রান্তি এবং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্র। অনেকেই এই গ্রেফতারকে একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন যা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, সরকার সমর্থিত একটি অংশ মনে করছে, এই গ্রেফতারের মাধ্যমে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং এতে দলীয় কর্মকাণ্ড আরও সুশৃঙ্খল হবে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বর্তমানে বেশ উত্তপ্ত। দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে এই গ্রেফতারের বিষয়ে আলোচনা করছেন এবং দলের ভেতরে একটি বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। অনেকেই এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হিসেবে মনে করছেন এবং সরকারের সমর্থনে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

মো. জাহাঙ্গীর কবিরের গ্রেফতারের পর দলীয় নেতাকর্মীরা দ্রুত একটি জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছেন যেখানে এই ঘটনার পেছনে থাকা প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। দলের শীর্ষ নেতারা এই বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে একটি বৃহত্তর আলোচনা এবং সঠিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মো. জাহাঙ্গীর কবিরের গ্রেফতার শুধু বরগুনা জেলা নয়, পুরো বাংলাদেশে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার সাথে তার ফোনালাপের পর থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং এই গ্রেফতারের পেছনে থাকা কারণগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ঘটনা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিদ্যমান বিভক্তিকে আরও উস্কে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপগুলির দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছেন, যা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মোড় আনতে পারে।

/s24online

Share This Article
Leave a comment