বগুড়া সদর উপজেলার ঠেঙ্গামারা এলাকায় একটি ছাত্রীনিবাস থেকে নার্সিং শিক্ষার্থী নাইমা হাসান নূপুরের (১৯) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় এমএম ছাত্রীনিবাসের ৩য় তলায় ঘটেছে।
নাইমা হাসান নূপুর দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার পত্নীচান এলাকার হাসান আলীর মেয়ে। তিনি বগুড়া টিএমএসএস নার্সিং কলেজের বিএসসি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বগুড়া ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্দুর রহমান বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রী নিবাসের মহিলা নিরাপত্তাকর্মী নূপুরকে ডাকতে এলে রুমের ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে একপর্যায়ে দরজা ভেঙে রুমে ঢোকেন। পরে গলায় ওড়না পেঁচানো নূপুরকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রুমে তল্লাশি করে বেশ কিছু চিরকুট পাওয়া গেছে।”
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে নূপুর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসআই আব্দুর রহমান জানান, “আমরা সব বিষয় তদন্ত করছি।”
হোস্টেল সিকিউরিটি শাহানা বেগম বলেন, “রুমের দরজা লাগিয়ে ছিল নূপুর। পাশের রুমের দুজন ছাত্রী হাসপাতালে ডিউটিতে যাওয়ার সময় নূপুরকে ডাকাডাকি করলে তার কোনো সাড়া না পেয়ে তারা চলে যায়। পরে নিচে আমাকে বিষয়টি জানায়।”
শাহানা বেগম আরও বলেন, “আমি নিচ থেকে তৃতীয় তলার নূপুরের রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলেও কোনো সাড়া পাইনি। একপর্যায়ে দরজার সামান্য ফাঁক দিয়ে দেখি সে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে। পরে দরজা ভেঙে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।”
ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক রেদওয়ানুর রহিম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের রুম থেকে বেশ কিছু চিরকুট সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সব কিছু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিদর্শক রেদওয়ানুর রহিম আরও জানান, “পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হবে।”
এমএম ছাত্রীনিবাসে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠীরা নূপুরের মৃত্যুতে শোকাহত। তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, নূপুর ছিল খুবই মেধাবী ও বন্ধুসুলভ। কিন্তু তার আচরণে কিছুদিন ধরে বিষণ্নতার ছাপ দেখা যাচ্ছিল। সহপাঠীরা মনে করছেন, হয়তো কোনো মানসিক চাপে পড়েই সে এমন করুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাইমা হাসান নূপুরের অকাল মৃত্যু নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। তার বন্ধুরা, পরিবারের সদস্যরা এবং পুলিশ সবাই মিলেই এই ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তৎপর রয়েছেন। প্রেমের সম্পর্কের ইঙ্গিত থাকলেও, অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নূপুরের পরিবারের সদস্যরা এখন শোকাহত অবস্থায় রয়েছেন। তারা চাইছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। নূপুরের বাবা হাসান আলী বলেন, “আমার মেয়ে ছিল খুবই ভালো এবং মেধাবী। আমরা কখনও ভাবিনি সে এমন কিছু করতে পারে। আমরা চাই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হোক।”
নূপুরের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সমাজের সকল স্তরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীরা এমন করুণ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে।
বগুড়া টিএমএসএস নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রুবিনা আখতার বলেন, “নূপুরের মৃত্যু আমাদের সবাইকে মর্মাহত করেছে। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
নাইমা হাসান নূপুরের মৃত্যু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা আমাদের সমাজের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। আমরা সবাই চাই, এমন করুণ ঘটনা আর না ঘটে এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।