বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করেছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে কত প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো স্পষ্ট তথ্য দেননি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। শেষ খবর অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এসব সংঘর্ষেও অনেকে আহত হন।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে গণআন্দোলনের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। বিক্ষোভ মিছিলে গণজমায়েত তৈরির জন্য দেশের সাধারণ মানুষকেও অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বৃহত্তর গণআন্দোলনের দিকে আমাদের যেতে হবে। কারণ এই আন্দোলন এখন শুধু আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এতে যখন সরকারের সর্বোচ্চ স্থান থেকে পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে দমনের চেষ্টা করা হয়েছে; সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।”
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল।
আরও পড়ুন : কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধা: আহত একাধিক, উত্তপ্ত রংপুর
কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরবর্তীতে, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন বর্তমানে একটি বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও, এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এবং এর প্রভাব কি হবে তা সময়ই বলবে। তবে, জনগণের অংশগ্রহণ এবং আইনের শাসন বজায় রেখে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া জরুরি।
/ s24online