শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলা

s24 online
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৪ আগস্ট ২০২৪:

 আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এই অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সহিংসতার জন্য এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

 মামলার প্রেক্ষাপট

৫ আগস্ট সাভারে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়ামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর তার বাবা বুলবুল কবিরের পক্ষে গাজী এম এইচ তানিম এই অভিযোগ দায়ের করেন। ৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিয়ামের মৃত্যু হলে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।

আইন উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া

মামলা দায়েরের আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে জানান, “জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা সম্ভব। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “গণহত্যা ও গুলি বর্ষণের বিচার হবে মামলা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হবে।”

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার ফোনালাপের পর গ্রেফতার: বরগুনার আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির

তদন্ত সংস্থার পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযোগটি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এর ফলে মামলার তদন্ত শুরু হলো। তিনি বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার পর আমরা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অফিসে প্রতিবেদন জমা দেবো।”

 অভিযুক্তদের তালিকা

এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ যেসব ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ।

রাজনীতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

এই মামলা দায়েরের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াত-ই-ইসলামি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের দাবি, সরকার এই ঘটনাকে ঢাকার চেষ্টা করছে এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা এই মামলাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া

এই মামলার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তদন্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করছে, এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে। জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক মানের অনুসারে তদন্ত প্রক্রিয়া চলবে এবং গণহত্যার অভিযোগের সঠিক বিচার নিশ্চিত হবে।”

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে অগ্রসর হবে তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলে এর ফলাফল দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষও মামলাটির প্রতি গভীর নজর রাখছে, কারণ এর ফলাফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।

এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত কীভাবে দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।

/ s24online

Share This Article
Leave a comment