ঢাকা, ২৩ আগস্ট:
বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ১১ জেলার প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, কক্সবাজারে ৩ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন এবং লক্ষ্মীপুরে ১ জন রয়েছেন।
সরকারি তৎপরতা এবং সহায়তা:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বন্যার সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার পাশাপাশি তাদের খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, “প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দ্রুত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও মাঠে রয়েছে।
কুমিল্লা ও ফেনীর পরিস্থিতি বিশেষ পর্যবেক্ষণে:
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয় যে, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি তদারকির জন্য সেখানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা অবস্থান করছেন। স্থানীয় প্রশাসনও জরুরি ভিত্তিতে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
সরকারি সহায়তা:
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারিভাবে প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্গতদের মধ্যে বিতরণের জন্য ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চালও প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, “আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই ত্রাণ সামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দিতে। এছাড়া, ত্রাণ কার্যক্রমে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য আমাদের হেল্পলাইন খোলা রয়েছে।”
বন্যার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি:
এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খাত। মাঠে থাকা ধান, সবজি, ও অন্যান্য ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, বন্যার কারণে গ্রামের রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও পানি প্রবেশ করেছে। যাতায়াত ব্যবস্থার বিঘ্ন ঘটায় সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
একজন স্থানীয় কৃষক জানান, “আমাদের ধান খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা জানি না কিভাবে এই ক্ষতি পূরণ করব।” পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষকদের সাহায্য করার জন্য সরকারিভাবে কৃষি ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয়:
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও সহায়তা পাঠানোর পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল টিম গঠন করে দুর্গত এলাকাগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি।”
মানুষের করণীয়:
এই সংকটকালে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে যারা নিম্নাঞ্চলে বসবাস করছেন, তাদেরকে বন্যার পানি থেকে দূরে থাকতে এবং প্রয়োজন হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে নিকটস্থ প্রশাসন ও হেল্পলাইনের সাথে যোগাযোগ করার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এবারের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সহায়তায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, বন্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও উচিত সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা।
/ s24online