কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পুনরায় শুরু হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে চলমান আন্দোলনের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন ও পুনর্নির্ধারণ করতে হয়েছে। অবশেষে, বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) আন্তঃশিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ থেকে নতুন পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।
স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, স্থগিত তত্ত্বীয় পরীক্ষাসমূহ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো ১৫ থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, ১১ আগস্ট থেকে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে চলমান সহিংসতা ও অস্থিরতার কারণে তা আবারো পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এই বছরের এইচএসসি পরীক্ষার শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন, যেখানে মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব
কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে একটি বড় আলোড়ন তৈরি করেছে। মূলত, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ক্রমশ সহিংস হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, মেধার ভিত্তিতে কোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হোক। তবে, আন্দোলনের সাথে জড়িত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে সংঘর্ষ, এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
ফলস্বরূপ, পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এবং যাতে পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। গত ১৮, ২১, ২৩, ২৫, ২৮ জুলাই এবং ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ইমন হত্যা মামলা: রাজধানীতে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
পরীক্ষার স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কেউ কেউ এই সময়সূচি পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে, কারণ এতে তাদের আরও প্রস্তুতির সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে, অনেকেই উদ্বিগ্ন যে, বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ফলে তাদের মানসিক চাপ ও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়েছে।
ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিবার যখন পরীক্ষা স্থগিত হয়, তখন আমাদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটে। তবে আমরা আশাবাদী যে, এবার আর কোনো পরিবর্তন হবে না এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে পারব।”
অন্যদিকে, আরও একজন শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন যে, “স্থগিত হওয়া পরীক্ষার জন্য পুনরায় প্রস্তুতি নেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। তবে, পরিস্থিতির কারণ বুঝতে পেরে আমরা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি।”
শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
শিক্ষকরাও এই পরিস্থিতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বারবার পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। একজন কলেজের শিক্ষক বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। এই কঠিন সময়ে তাদের মনোবল ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, পরীক্ষার নতুন সূচি অনুযায়ী তারা ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে।”
তবে, কয়েকজন শিক্ষক মনে করছেন যে, এই সময়সূচি পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে নতুনভাবে উদ্দীপনা যোগাবে এবং তারা আরও ভালোভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
আশা করা যাচ্ছে, নতুন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষা কোনো বিঘ্ন ছাড়াই সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াতে এবং পরীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে শিক্ষাবোর্ড এবং অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থাগুলো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে এবং শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারবে।”
এইচএসসি পরীক্ষার পুনরায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন সুযোগ এবং এই সময়ে তাদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। সবাই আশা করছে, এ বছরের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করবে।
/ s24online