কোটা আন্দোলন সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার, সজীব ওয়াজেদ জয়

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার অসন্তোষ ও সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জানান, কোটা আন্দোলন সামলাতে সরকারের প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপ করা উচিত ছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত ছিল। দেশের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত শিক্ষার্থীরা, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, কোটা ব্যবস্থার ফলে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে এবং এটি তাদের ভবিষ্যৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকারের প্রতি চাপ বাড়তে থাকলেও, শুরুতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সরকারের অবস্থান ও আদালতের ভূমিকা

সজীব ওয়াজেদ জয় তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে, সরকারের উচিত ছিল আন্দোলনকারীদের কথা শুনে কোটার বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, যা আন্দোলনের উত্তেজনা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। জয় আরও উল্লেখ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোটা কমানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিল, কিন্তু আদালত সেই দাবিকে সমর্থন করেনি। ফলস্বরূপ, সরকার বিষয়টি বিচার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেয় এবং আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলা

সহিংসতার পেছনে বিদেশি সংস্থার হাত ?

সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল। তার মতে, ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সফলতার কারণে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জয় মনে করেন, কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাই এই আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করে আন্দোলনকারীদের কাছে সরবরাহ করেছিল।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগ

সজীব ওয়াজেদ জয় সাক্ষাৎকারে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন, যা হলো ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঘটনা। জয় উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তবে, তার মায়ের নিরাপত্তার জন্য জয় নিজে ও তার খালা শেখ রেহানা তাকে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেন। জয় আরও বলেন, পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তা একদিন আগেও কেউ ভাবেনি।

 ভারতের প্রতি বার্তা

সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রতি বার্তা দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিনি আশা করেন যে, ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, অরাজকতা বন্ধ হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। জয় আরও জানান, আওয়ামী লীগ এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে তারা জয়ী হবেন বলে তিনি নিশ্চিত।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই স্বীকারোক্তি ও মন্তব্যগুলো প্রমাণ করে যে, সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনটি সঠিকভাবে সামলানো হয়নি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অনেক শিক্ষার্থী হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সরকারী চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টি এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আন্দোলন এড়াতে সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা শোনা এবং তাদের দাবির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে যে, ভবিষ্যতে যেকোনো আন্দোলন বা আন্দোলনকারীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে এবং সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

/ s24online

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version