পল্টন থানায় পুলিশের কাজে বাধা: ৪ হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা। পুরোনো ছবি

ঢাকা :

রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে চার হাজার ১১৪ জন আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) পল্টন থানার উপপরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন ভুইয়া বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলার ভিত্তিতে ৯৫ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের ঢাকার আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।

সচিবালয়ের সামনের সংঘর্ষ: ১০৯ আনসার সদস্য আদালতে হাজির

একই দিনে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা আরেকটি মামলায় ১০৯ জন আনসার সদস্যকে ঢাকার একটি আদালতে হাজির করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলায় আনসার সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। 

আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণের অভিযোগ

গতকাল রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে সচিবালয়ে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে চলমান পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আনসার বাহিনীর একটি দল উপদেষ্টাদের আটকে রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার দাবী অনুযায়ী, আনসার সদস্যরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় না রেখে সহিংস আচরণ করেছে, যা সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। 

হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে তাদেরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আনসার সদস্যরা। 

আরও পড়ুন : নওগাঁর রানীনগরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ: আ.লীগকে দায়ী করে বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীদের ওপর আনসার বাহিনীর হামলা

সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের একটি দল আনসার বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণের শিকার হয়, যেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাল্টাপাল্টি ঘটনা ঘটতে থাকে। এই ঘটনার কারণে এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পরে শিক্ষার্থীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আনসার সদস্যদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। 

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

সংঘর্ষের ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি এবং যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনসার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও আনসার বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সংঘর্ষের কারণ এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদার

এই ঘটনার পর সচিবালয়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সচিবালয়ের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সচিবালয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার পয়েন্টে কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করলেও আনসার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা। তাদের দাবি, এই ঘটনার জন্য দায়ী আনসার সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।

অন্যদিকে, সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন যে, এই ধরনের সহিংসতা সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং নিরাপত্তার জন্য তারা উদ্বিগ্ন।

ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করছে

সচিবালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা দেশের নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা না শুধু সচিবালয়ের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে, বরং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এমন কোনও পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করা, যাতে দেশব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে। 

/ s24online

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version