বন্যার কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেল যোগাযোগ বন্ধ: কবে স্বাভাবিক হবে ?

ফেনীতে পানিতে ডুবে যাওয়া রেললাইন | s24online

চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের অঞ্চলে চলমান বন্যার কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। রেললাইন পানির নিচে ডুবে থাকায় কবে নাগাদ এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। রেলওয়ে কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে পারছেন না, যা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বন্যার প্রভাব এবং রেল যোগাযোগ বন্ধ

গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন ফেনী থেকে হাসানপুর পর্যন্ত পুরোপুরি পানির নিচে চলে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে s24online কে জানান, এই মুহূর্তে এই রুটে ট্রেন চলাচল করানো একেবারেই অসম্ভব। রেললাইন সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অবিলম্বে মেরামত করা দরকার। 

শুক্রবার দুপুর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করা হয়, যা এখনো চলছে। সাইফুল ইসলাম আরও জানান যে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য শনিবার একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। আজ রোববারও আরেকটি উদ্ধারকারী ট্রেন পাঠানো হবে, যার মাধ্যমে রেললাইনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা হবে। তবে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে না।

আঞ্চলিক রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা সাতটায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে একটি স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে আসবে। এছাড়াও, সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় নাজিরহাট লোকাল ট্রেন চলার কথা রয়েছে। এই উদ্যোগগুলি মূলত স্থানীয় যাত্রীদের সুবিধার জন্য নেওয়া হয়েছে, যাতে করে তারা সীমিত হলেও কিছুটা ট্রেন যোগাযোগ সুবিধা পান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চালু

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন সকাল আটটায় চট্টগ্রাম থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানিবাহী একটি ট্রেনও চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এই সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা অব্যাহত রাখতে।

রেললাইন ক্ষয়ক্ষতি ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া

বন্যার কারণে রেললাইনের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা পুরোপুরি নির্ধারণ করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানিয়েছেন, বন্যার পানি নামার পরই রেললাইনের প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। এর পরই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ শুরু করা হবে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা আশা করছেন, যত দ্রুত সম্ভব তারা এই মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন, যাতে করে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু করা যায়।

যাত্রীদের দুর্ভোগ এবং সম্ভাব্য করণীয়

বন্যার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াত করেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা বাস কিংবা অন্যান্য যানবাহনের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জন্য আর্থিকভাবে বেশ চাপ তৈরি করছে। 

আরও পড়ুন : কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খোলা: কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর বৃদ্ধির সতর্কতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যাতে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। এছাড়া, রেললাইন মেরামতের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অতিরিক্ত জনবল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়োগ করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে বন্যার ঘটনা ঘটে। তাই, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত বন্যা পূর্বাভাস পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেমন রেললাইনগুলোর উচ্চতা বাড়ানো বা উন্নত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়া, রেলওয়ের কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি আরও উন্নত করা উচিত, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারেন।

চট্টগ্রাম-ঢাকা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য। বন্যার পানি নামার পর রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করে মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। তবে, এই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে রোধ করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে, যা রেলওয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

/ s24online

TAGGED:
Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version