গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে কোটা বাতিলের দাবিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। ছাত্রদের এই বিক্ষোভে দুজন নিহত ও শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তবে কোথা থেকে নিহতের খবর পেয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ জুলাই) পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলার এমন দাবি করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলারের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, “সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে কোটা বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। কিন্তু তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে চলমান এই প্রতিবাদের বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?”
মিলার জবাবে বলেন,
“আমরা ঢাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের বিষয়ে অবগত, যাতে দুজন নিহত ও কয়েকশ’ আহত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।” তিনি আরও বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান এবং আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই। যারা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা।”
মিলার
তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে দুজন নিহত হওয়ার দাবি করলেও, কীভাবে বা কোথা থেকে তিনি এ খবর পেয়েছেন তা খোলাসা করেননি। ওই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকা কোনো সাংবাদিকও মিলারের এমন তথ্যের উৎস সম্পর্কে জানতে চাননি।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন নয়। ২০১৮ সালে দেশব্যাপী ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যার ফলে সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে, বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ আন্দোলনেও একই চিত্র দেখা গেছে। সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন এবং তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হয়। মঙ্গলবারও (১৬ জুলাই) পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে দুই পক্ষ। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোসহ চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে সারাদেশে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে, হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, ছাত্রলীগও পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন : কক্সবাজারে ছাত্রলীগ-কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ: ভাঙচুর ও যানজট
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তবে, নিহতের খবরের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে এমন কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি, যা থেকে এই তথ্যের সত্যতা নির্ধারণ করা যায়। এর ফলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এই দাবির পেছনে কী তথ্যসূত্র রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এই আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন দমন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলমান রয়েছে এবং পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের নজরও এই আন্দোলনের দিকে রয়েছে। তবে, নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই আন্দোলন মোকাবিলায় সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে সহিংসতার ঘটনা আর না ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
/ s24online