বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে অংশ নেন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ব্যাংকারদের অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছে, যা তাদের কাজের স্বাধীনতা হ্রাস করছে এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। ব্যাংকের আয়কর, পদোন্নতি ও ইনসেনটিভ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এই ধরনের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তারা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।
স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আককাছ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে ব্যাংকের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অযাচিত সব রকমের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক সুবিধা প্রদানের দাবি জানান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উল আলম মানববন্ধনের সঞ্চালনা করেন। বক্তারা বলেন, ব্যাংকগুলোকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উচিত যাতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আবদুর রায়হান বলেন, “আমরা সরকারের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকে কাজ করি, তবে আমাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় না। মন্ত্রণালয়ের এই অযাচিত হস্তক্ষেপ আমাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে।” অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন তুষার বলেন, “আমরা শুধুমাত্র আমাদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মানের দাবিতে দাঁড়িয়েছি। আমাদের পদোন্নতি, ইনসেনটিভ ও আয়করের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের কাজ করতে চাই এবং আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই।” সহসভাপতি মরিয়ম বেগম বলেন, “ব্যাংকগুলোর স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা আরও ভালোভাবে সেবা প্রদান করতে পারে।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতির প্রতি অসন্তোষ ও ব্যাংকিং সেক্টরে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং সেক্টরে সরকারের অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে সমস্যা তৈরি করে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট: চীনের কাছে ৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইউয়ান ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ
তারা বলছেন,
ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ দিলে তাদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে ব্যাংকাররা তাদের সমস্যা তুলে ধরেছেন এবং সরকারের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছেন। সরকারি পর্যায়ে এই বিষয়ে আলোচনা এবং সমাধান খোঁজা জরুরি, যাতে ব্যাংকিং সেক্টরে আরও উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা আসে। সরকারের উচিত হবে ব্যাংকিং সেক্টরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলি। এদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংকারদের এই মানববন্ধন সেই প্রয়োজনীয়তার দিকেই ইঙ্গিত দেয়। এখন সময় এসেছে সরকারের কাছে তাদের কথা পৌঁছানোর এবং যৌক্তিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার।