রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাস, যা সম্প্রতি পরপর চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, সেখানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ অভিযানে হোস্টেলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় ধারালো অস্ত্র এবং ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশের এক সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের অন্ধকার দিক প্রকাশিত হয়েছে।
যৌথ অভিযানের পটভূমি
প্রথমত, এই অভিযানের শুরুতে রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী জানান যে, হোস্টেলের এফ ব্লকের ২য় তলায় ৬ নম্বর রুমে ককটেল মজুত রয়েছে বলে তারা তথ্য পেয়েছিলেন। এই তথ্য পাওয়ার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুমগুলোতে তল্লাশি চালায় এবং রাজনীতির কাজে ব্যবহৃত রুমগুলো থেকে দেশীয় অস্ত্র রামদা, রড, লাঠি এবং ককটেল উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র এবং বোম্ব ডিসপোজাল
অভিযানে উদ্ধার করা দেশীয় অস্ত্র এবং ককটেলগুলো পরবর্তীতে বোয়ালিয়া থানায় জমা দেওয়া হয়। ককটেলগুলো বোম্ব ডিসপোজাল দলের মাধ্যমে মুসলিম হোস্টেলের মাঠে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। তবে এই ঘটনায় ছাত্রদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, এমন একটি হোস্টেলে কীভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং বোমা মজুত রাখা হলো, সেটি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন : সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড
প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়কের মন্তব্য
হোস্টেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক এবং ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক জানান, তিনি সম্প্রতি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন এবং সেই কারণে হোস্টেলে চলমান বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তবে, তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, তার দায়িত্বকালীন সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন যে, ছাত্রাবাসের রুমগুলোতে কে কখন কী নিয়ে ঢুকছে, তা দেখা বা জানার কোনো সুযোগ তাদের ছিল না।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক জানান, তিনি ইতোমধ্যেই বদলির জন্য আবেদন করেছেন এবং বর্তমানে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। হোস্টেলের নতুন সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তারা ছাত্রদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। রুম পরিষ্কার করার সময় এসব অস্ত্র ও ককটেল পাওয়া যায়, এবং তারপরেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে হয়তো কেউ এসব সরঞ্জাম মজুত করেছে।
ছাত্রাবাসের পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ
এই ঘটনার পর, রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলের পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার উদ্ভব শিক্ষার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজশাহী কলেজের ছাত্রাবাসগুলোতে এতদিন ধরে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল, তা এখন চরম সংকটের মুখে। সেনাবাহিনী ও বিজিবির অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্র এবং ককটেলগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ বিষয়ে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয়
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তারা খতিয়ে দেখছেন, কে বা কারা এসব অস্ত্র এবং ককটেল মজুত রেখেছে এবং কী উদ্দেশ্যে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
অভিযান ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, অনেকেই ভয় পাচ্ছেন এবং হোস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী এই ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, হোস্টেলের পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে এই ধরনের ঘটনা একটি সতর্ক সংকেত। এটি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে হবে।
/ s24online