চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে গত রোববার ঢাকার সচিবালয়ে আনসার সদস্যদের ঘেরাও ও সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিনটি থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪২০ জন আনসার সদস্যের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ হাজার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩৬৯ জন আনসার সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে শাহবাগ, রমনা, পল্টন এবং বিমানবন্দর থানায় এসব মামলা করা হয়।
ঘটনার পটভূমি
রোববার (২৫ আগস্ট) চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শত শত আনসার সদস্য ঢাকার সচিবালয়ে অবস্থান নেন। তারা সচিবালয়ের মূল প্রবেশপথগুলিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন, যাতে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী সচিবালয়ে প্রবেশ বা বের হতে না পারে। তাদের এই কর্মসূচি সরকারের কাছে জাতীয়করণের দাবি জানানোর একটি প্রচেষ্টা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসা আনসার সদস্যরা অবশেষে এমন একটি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন, যা দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
আনসারদের এই ঘেরাওয়ের ফলে সচিবালয়ে কাজ করা সরকারি কর্মকর্তারা আটকে পড়েন। অবরুদ্ধ কর্মকর্তাদের মুক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে, আনসার সদস্যদের সাথে এই শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন, এবং বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই সংঘর্ষের জেরে চারটি মামলা দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন : এবার ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দিলো ভারত
মামলার বিস্তারিত
শাহবাগ থানা:
শাহবাগ থানায় আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম জানান, এই মামলায় ২০৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩ হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় ১৮৯ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পল্টন থানা:
পল্টন থানার সূত্রে জানা যায়, একই ঘটনার জন্য সেখানে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় ১১৪ জন আনসার সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪ হাজার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। পল্টন থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত ৯৫ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
রমনা থানা:
রমনা থানায়ও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় ৯৮ জন আনসার সদস্যের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩ হাজার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। রমনা থানায় এখনও পর্যন্ত ৮৫ জন আনসার সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর থানা: এর বাইরে বিমানবন্দর থানায়ও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববারের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক অবরোধ করার ঘটনায় এই মামলা করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ওবায়দুর রহমান জানান, আনসার সদস্যদের এই আন্দোলন এবং সংঘর্ষের কারণে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও জানান, সংঘর্ষে জড়িত আনসার সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সরকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
সরকারি চাকরি জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘদিন ধরে চললেও এই আন্দোলন হঠাৎ এমন সহিংস মোড় নেবে, তা কেউই কল্পনা করতে পারেনি। সরকারি কর্মকর্তারা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি প্রদান করা হয়নি।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবি যুক্তিসঙ্গত হলেও এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সচিবালয়ে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ধরনের পরিস্থিতির কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তাদের কাজ করতে অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও এবং সংঘর্ষের ঘটনায় আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
এই সংকট সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আনসার সদস্যদের দাবির প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করতে পারে।
—
/ s24online